সুধী, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই নমস্কার।

সুপ্রাচীনকাল থেকেই “ বাংলাদেশ “ সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি পবিত্র তীর্থ ভূমি। এই ভূমিতে ভগবান শ্রী রাম চন্দ্র পদার্পন করেছেন সীতা মাতাজি আর লক্ষণকে নিয়ে । এই ভূমিতে মহামায়া সতী’র পবিত্র দেহ খন্ডাংশ রয়েছে। এখানেই পবিত্র নশ্বর দেহ রেখেছেন পরম ব্র্হ্মচারী বাবা লোকনাথ। পদচিহ্ন রয়েছে অগুনিত সাধু, মহাপুরুষ, সন্ন্যাসী আর পূন্যার্থীদের। শতাব্দির পর শতাব্দি বঙ্গ, বঙলা বা বাংলাদেশ যে নামেই এই পবিত্র মাটি পরিচিত হোকনা কেনো একদা এখানে শুধুমাত্র সনাতন হিন্দু ধর্মীয় মানুষই বসবাস করতো। কালের আবর্তে বর্ণ বৈষম্য আর সামাজিক নানা ঘাত-প্রতিঘাতে সেই সব সনাতনীরা অনেকে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইতিহাস এমন যে, এই দেশ বা মাটিতে সনাতন হিন্দুরা এখন সংখ্যালঘু। এখনো ১০% এর কিছু বেশি হিন্দু জনসংখ্যা রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কোনো পট পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনো মানুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ দেখা দিলে এই সংখ্যা ১% এ নেমে আসার আশংকা করেছেন বিজ্ঞজনেরা।

বেসরকারি ধারনা মতে, এই সময়ে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩০ লাখ একর হিন্দুদের জমিজমা বেদখল হয়ে আছে, কিংবা মামলা মোকাদ্দমায় ভোগদখল করতে পারছেনা। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নানা রকম অত্যাচার নির্যাতনে দিনকে দিন মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে হিন্দুদের। যা হিন্দু সম্প্রদায় বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ। সনাতন হিন্দুদের মধ্যে এখনো বর্ণবাদ, হিংসা এবং মতানৈক্য রয়েছে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় দুষ্কৃতিকারী বিধর্মীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন নির্যাতনের শিকার । হিন্দু মা বোনেরা ধর্ষন, খুন, অপহরণ এবং শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন অহরহ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্দির, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি । দখল, লুটপাট, ভাংচুর করা হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে হচ্ছে বিপর্যস্ত। নিরুপায় হয়ে উঠেছে ধর্ম পালনে। মৌলিক-মানবিক অধিকার রক্ষায় সনাতন হিন্দুদের প্রতিবাদ করারও সাহস হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

এই অবস্থার পরিবর্তন চায় বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন। বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন চায় হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হোক। সব বিভেদ ভুলে একাট্টা হোক শুধু নিজেদের জীবনের আত্মরক্ষা, সম্পদ এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষার জন্য। দেশ ও সমাজে টিকে থাকার জন্য গণজাগরণ হোক।

বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের মূল এবং প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সনাতন হিন্দুদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে মৌলিক ঐক্য গড়ে তোলা। সনাতন হিন্দু ধর্মের মানুষের আত্মরক্ষা, নির্বিঘ্নে ধর্ম প্রতিপালন এবং মানবাধিকার রক্ষায়

জনসচেতনতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জনকল্যানমূলক কাজ করা। সনাতন হিন্দুদের যে কোনো বিপদকালীন পরিস্থিতিতে আইনগত সহায়তা প্রদানে সচেষ্ট থাকা। নিরীক্ষা, পরিসংখ্যান এবং গবেষণার মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।

হিন্দুদের ব্যক্তিগত ও দেবত্তোর সম্পদ ও সম্পত্তি সুরক্ষায় আইনগত সহায়তা প্রদান। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা ফলপ্রসু করতে পদক্ষেপ গ্রহণ।

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব পালন কিংবা যে কোনো প্রকারের বিপদ ও দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সহযোগিতামূলক কাজ করা। কমপক্ষে ৪৪ টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের। সনাতন হিন্দুদের সার্বিক কল্যানে বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশন আগামী দিনে একটি টেকসই, যুগোপযোগী, গবেষনাধর্মী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের সঙ্গে থাকুন। হাতে হাত ধরে বলুন ওঁ নম: শিবায় : ।